রিপোর্ট:নাফিজ ইসলাম
ঢাকার শিল্পকলা একাডেমিতে ‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের প্রদর্শনী বন্ধ এবং গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন আয়োজিত সমাবেশে হামলার প্রতিবাদ ও নাট্যকর্মীদের নিরাপত্তার দাবি জানাতে পথনাটক প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে আরণ্যক নাট্যদল।
আরণ্যক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টার দিকে জাতীয় নাট্যশালার প্রবেশদ্বারে এই প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে।
‘নাটক মোদের অধিকার, রুখবে নাটক সাধ্য কার’ স্লোগান ধারণ করে এই আয়োজনে মঞ্চস্থ হবে আরণ্যক নাট্যদলের ‘মূর্খ লোকের মূর্খ কথা’ ও প্রাচ্যনাটের ‘স্পিক আউট’ নামে দুটি নাটক।
এছাড়া আরণ্যক নাট্যদলের শিল্পীরা নাটকের গানও পরিবেশন করবেন।
আরণ্যকের প্রধান সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) শামীমা শওকত লাভলী বলেন, “প্রদর্শনী চলাকালীন নাটক বন্ধ করে দেওয়া ও তার প্রতিবাদে আয়োজিত সভায় হামলা করার মত যে ন্যাক্কারজনক ঘটনা নাট্যাঙ্গনে ঘটে গেল, তা দেখে আমরা প্রচন্ড ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত।”
এর আগে গত ৯ নভেম্বর নাট্যশালার মিলনায়তনে ‘কম্পানী’ নাটকের প্রদর্শনী বাতিল করে প্রতিবাদ জানিয়েছিল আরণ্যক। এবার মিলনায়তনের বাইরে পথনাটকের প্রদর্শনী করে নাট্যকর্মীদের নিরাপত্তার দাবি তুলতে চলেছেন তারা।
লাভলী বলেন, “রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নাট্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না। দলগুলো নির্বিঘ্নে প্রদর্শনী করতে পারছে না। তাই বলে তো নাটক থেমে যেতে পারে না। মিলনায়তনে নাটক বন্ধ করার প্রতিবাদে আমরা পথে পথে নাটক করবো। রাষ্ট্র নিরাপত্তা দিতে না পারলে নাট্যকর্মীরা নিজেরাই তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে।”
সারাদেশের নাট্যকর্মীদের এই আয়োজনে উপস্থিত থাকতে আহ্বানও জানিয়েছেন আরণ্যকের প্রধান সম্পাদক।
যা ঘটেছে
গত ২ নভেম্বর দেশ নাটক প্রযোজিত ‘নিত্যপুরাণ’নাটকের প্রদর্শনী মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওই দিন টিকেট বিক্রি শুরু হয় বিকাল থেকে।
এরপর সন্ধ্যা ৬টার দিকে একদল লোক শিল্পকলার গেইটের সামনে দেশ নাটকের সদস্য এহসানুল আজিজ বাবুকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।
পরে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক জামিল আহমেদ গিয়ে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করলে যথারীতি নাটকের প্রদর্শনী শুরু হয়। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা ফের সংগঠিত হয়ে নাট্যশালার গেইটের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এক পর্যায়ে তারা গেইট ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে মহাপরিচালক ‘দেশ নাটকের’ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে প্রদর্শনী বন্ধ করার সিদ্ধান্ত দেন।
জামিল আহমেদ বলেন, দর্শকের ‘নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে’ নাটকের প্রদর্শনী মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি দেখে তার আশঙ্কা হয়েছিল, শিল্পকলা একাডেমিও ‘আক্রান্ত হতে পারে’।
এই ঘটনায় উদীচী, দেশ নাটক বিবৃতি দিয়ে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বিক্ষুব্ধ থিয়েটারকর্মীরাও।
নাটক বন্ধের ঘটনায় গত ৮ই নভেম্বর বিকেলে প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন। সমাবেশ চলাকালীন কয়েকজন লোক এসে পেছন থেকে ‘ডিম ছুঁড়ে’ মারে এবং নাট্যকর্মীদের ধাওয়া খেয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়।
পরে নাট্যকর্মীরা নাট্যশালার সামনে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকে ‘নাটক মোদের অধিকার/রুখবে নাটক সাধ্য কার’।
এর আধা ঘণ্টা পর ৪০ থেকে ৫০ জন বিক্ষোভকারী সংগঠিত হয়ে আবারও এসে নাট্যশালার সামনে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় সেনাবাহিনীসহ আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী উভয়পক্ষের মাঝে ব্যারিকেড তৈরি করেন।
নাট্যকর্মীরা অবস্থান নেন নাট্যশালার মেইন গেইটের সামনে। অন্যদিকে বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নেন দুর্নীতি দমন কমিশনের গেইটের সামনে। উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টি স্লোগানে উত্তপ্ত হয়ে উঠে নাট্যশালার সামনের চত্বর। সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় বিক্ষোভকারীরা নাট্যশালার সামনে থেকে চলে যান।
এর মধ্যে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন এই ঘটনার তদন্ত কাজের জন্য সাতদিনের সময় বেঁধে দিয়েছে।
এই সময়ের মধ্যে তদন্ত কাজ শেষ না হলে সারাদেশের নাট্যকর্মীদের নিয়ে শুক্রবার প্রতিবাদ সমাবেশ করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও জানিয়েছে ফেডারেশন।