1. admin@detective7.com : admin :
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩১ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
রাজনৈতিক দলগুলো যদি বলে যে তারা সংস্কার চায় না, তাহলে এখনই নির্বাচন দিয়ে দেবো ‘গণহত্যা’: ট্রাইব্যুনালে তোলা হচ্ছে মামুন-জিয়াউলসহ আরও ৮ আসামিকে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী আশ্বাসে সাংস্কৃতিক কর্মীদের ১৫ নভেম্বর সারা দেশব্যাপী সমাবেশ বাতিল করা হলো। পথনাটকের প্রদর্শনী করে নাট্যকর্মীদের নিরাপত্তার দাবি। বিএনপি নেতা হয়েওআওয়ামী লীগ সহ নিজ দলের কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করছেন খণ্ডযুদ্ধে হেরেছি, মূল যুদ্ধে এখনো হারিনি বিক্ষোভের মুখে নাটকের প্রদর্শনী বন্ধ শিল্পকলা একাডেমিতে।। সম্প্রতি শুটিং শেষ হলো চলচ্চিত্র ‘নদাই মানবজাতিকে বেঁচে থাকার জন্য বহু-গ্রহের সভ্যতা গড়তে হবে: ইলন মাস্ক এইচএসসির ১ লাখ ৮০ হাজার খাতা চ্যালেঞ্জ ঢাকা বোর্ডে

খণ্ডযুদ্ধে হেরেছি, মূল যুদ্ধে এখনো হারিনি

  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ৩ নভেম্বর, ২০২৪
  • ৩৫ বার পঠিত

রিপোর্ট : নাফিজ ইসলাম 

নাটক বন্ধ প্রসঙ্গে শিল্পকলার ডিজি: খণ্ডযুদ্ধে হেরেছি, মূল যুদ্ধে এখনো হারিনি

বিক্ষোভের মুখে শিল্পকলা একাডেমির মঞ্চে মাঝপথে একটি নাটকের প্রদর্শনী বন্ধ করে দেওয়া হয়।

একদল বিক্ষোভকারীর প্রতিবাদের মুখে শিল্পকলা একাডেমিতে নাট্যপ্রদর্শনী বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।শনিবার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে নাট্যদল দেশ নাটকের “নিত্যপুরাণ” নাটকের প্রদর্শনীতে এ ঘটনা ঘটে। প্রায় ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট দৈর্ঘ্যের নাটকটি শেষ হওয়ার ১৫ মিনিট আগে প্রদর্শনী থামিয়ে দিতে হয়।এদিন নাট্যদলটির প্রদর্শনী চলার সময়ে দর্শকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে, নাটক বন্ধের নির্দেশ দেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক (ডিজি) ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ। এবার বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন তিনি।

বিক্ষিপ্ত জনতা শিল্পকলার সামনে থেকে

বিক্ষিপ্ত জনতা শিল্পকলার সামনে থেকে

রবিবার সকালে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে নাটকের প্রদর্শনী বন্ধ প্রসঙ্গে কথা বলেন শিল্পকলার মহাপরিচালক।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, দর্শকদের নিরাপত্তার কথা ভেবে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নাটক বন্ধ করতে হয়েছিল তাকে। পরিস্থিতি দেখে তার শঙ্কা হয়েছিল, শিল্পকলা একাডেমিও “আক্রান্ত হতে পারে”।

এ সময় সৈয়দ জামিল আহমেদের বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ২২ জায়গায় শিল্পকলা একাডেমিতে হামলা হয়েছে। সেসব মাথায় ছিল। আর এখানে ভেতরে দর্শক ছিল। উত্তেজিত কেউ গিয়ে যদি দর্শকদেরও আক্রমণ করে বসে; দর্শকের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আমরা প্রদর্শনী বন্ধ করি। আমি ভেতরে গিয়ে দর্শকের কাছে ক্ষমা চেয়েছি।”

ঘটনার বর্ণনা করে জামিল আহমেদ বলেন, “শিল্পকলার আয়োজনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে যাত্রা উৎসব চলছে। আমি এবং নাট্যকলা বিভাগের পরিচালক ফয়েজ জহির সেখানে ছিলাম। নাট্যশালার সামনে বিক্ষোভ হচ্ছে শুনে আমি যাই। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলি। তারা বলেন, এহসানুল আজিজ বাবু স্বৈরাচারের দোসর। তার নাট্যদলের প্রদর্শনী করতে দেবেন না। আমি তাদের বুঝিয়েছি, দেশ নাটকের জনা বিশেক সদস্যও জুলাই–আগস্টের গণ–অভ্যুথানে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে গুলিবিদ্ধও আছেন।”

জামিল আহমেদ আরও বলেন, “প্রথমে তারা মেনে নেন; আমরা নাটকের প্রদর্শনী শুরু করতে বলি। কিন্তু পরে আবার বিক্ষোভ শুরু করেন; তারা উত্তেজিত হয়ে পড়েন।”

শিল্পকলা একাডেমি “আক্রান্ত হওয়ার” শঙ্কা তৈরি হয়েছিল মন্তব্য করে জামিল আহমেদ বলেন, “আমি এটাও বলেছি, আমার বুকের ওপর দিয়ে যান। তখন আমাকে পাশ কাটিয়ে দেয়াল টপকে কয়েকজন ঢুকে পড়েন। যখন গেট ভেঙে ফেলেন, তখন আমরা দেশ নাটকের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে প্রদর্শনী বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

এ ঘটনার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা কেন নেওয়া হলো না—এ প্রশ্নে জামিল আহমেদ বলেন, “মাত্র কিছুদিন আগেই গুলি চলেছে। আমরা আর দমন–পীড়ন চাইনি। সেখানে বিক্ষোভ করতে যারা এসেছিলেন, তাদের মধ্যেও দুজন ছিলেন জুলাই আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ।”

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাহারায় নয়, জনগণের আন্তরিক চেষ্টায় একটি জনবান্ধব শিল্পকলা একাডেমি গড়ে তোলার প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক।

বিক্ষিপ্ত জনতা শিল্পকলার সামনে থেকে

বিক্ষিপ্ত জনতা শিল্পকলার সামনে থেকে

তিনি বলেন, “গতকাল আমি একটা খণ্ডযুদ্ধ করেছি। অনেক চেষ্টা করেছি, নাটকের প্রদর্শনী যেন হয়। কিন্তু আমি হেরে গেছি। একটা খণ্ডযুদ্ধে হেরে গেছি। কিন্তু মূল যুদ্ধটায় এখনো হারিনি।”শিল্পকলা একাডেমির ভেতরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করলেও তাদের সহযোগিতা কেন নেওয়া হয়নি, তা জানতে চাইলে পাল্টা প্রশ্নে তুলে জামিল আহমেদ বলেন, “বলপ্রয়োগে থামাবেন? নাকি কথা দিয়ে থামাবেন? এখানে যারা এসেছেন, তারা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদের কষ্টের কথা বলেছেন। তাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীকে দাঁড় করিয়ে দেওয়াটা কি ঠিক ছিল? আমি মনে করেছি, এটা সেনাবাহিনীর জায়গা নয়।”সেনাবাহিনীকে জনতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিতে চাননি উল্লেখ করে জামিল আহমেদ জানান, শেষের দিকে সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা সেখানে এসেছিলেন এবং সেনাবাহিনীর দুটি গাড়িও এসেছিল।

গত ১৭ অক্টোবর নাট্যদল দেশ নাটকের এহসানুল আজিজ বাবু তার ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে লেখেন, “আসুন আমরা সবাই এই দেশকে বাঁচাই, জয় বাংলা বলে এই বাংলাদেশবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই।”

পোস্টের সঙ্গে একটি ছবিও শেয়ার করেন বাবু, যেখানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টাদের ছবি “এডিট করে জিন্নাহ টুপি পরানো হয়েছে” ওই পোস্ট ঘিরেই কিছু মানুষ জাতীয় নাট্যশালার সামনে আসেন বলে জামিল আহমেদের ভাষ্য।

বিক্ষিপ্ত জনতা শিল্পকলার সামনে থেকে

বিক্ষিপ্ত জনতা শিল্পকলার সামনে থেকে।

এ প্রসঙ্গে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক বলেন, “যে পোস্ট করা হয়েছিল, সেটি অত্যন্ত নিম্নরুচির। এটি বাবুকেও আমি বলেছি। আমি তাকে বলেছি, এভাবে নিম্নরুচির পোস্ট ফেসবুকে না লিখে যুক্তি দিয়ে নাটক করুন। নাটকের মধ্য দিয়ে সরকারের সমালোচনা করুন।”

শিল্পকলাকে জনবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে গতে তুলতে চান উল্লেখ করে তিনি বলেন, “জনগণকেই শিল্পকলার দায়িত্ব নিতে হবে। সেনাবাহিনীর পাহারায় নয়; জনগণই যেন শিল্পকলাকে রক্ষা করে। আমরা এমন জনবান্ধব শিল্পকলা চাই।”জামিল আহমেদ বলেন, “গত এক মাসে এখানে এমন অনেক নাটকের দল নাটক করেছে, যাদের নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। আমি এবং আমার সহকর্মীরা বলেছি, তাদের নাটক করতে দিতে হবে। দর্শক তাদের নাটক দেখে বিবেচনা করবে, তাদের নাটক দর্শক দেখবে কি না।”

তিনি আরও বলেন, “তারা কিন্তু নাটক করেছে। কোনো সমস্যা হয়নি। দেশ নাটকের ‘নিত্যপুরাণ’ নাটক নিয়েও আপত্তি ছিল না। উত্তেজিত জনতার আপত্তি কেবল একজন ব্যক্তিকে নিয়ে। পরে তারা দেশ নাটকের প্রদর্শনীও বন্ধের দাবি তোলেন।”

শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক বলেন, “আমি তাদের বুঝিয়েছি, শিল্পকলার কণ্ঠ যেন কেউ রোধ না করেন। শেখ হাসিনার মতো স্বৈরাচার আমরা হতে চাই না। আমি নাটক করে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি। দুবার তাদের বোঝাতেও পেরেছিলাম। কিন্তু পরে আর পারিনি।”

প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা গেছে, শনিবার বিকেল থেকে নাটকের টিকেট বিক্রি শুরু হয়। এরপর সন্ধ্যা ছয়টার দিকে একদল লোক শিল্পকলার গেটের সামনে দেশ নাটকের সদস্য এহসানুল আজিজ বাবুকে “আওয়ামী লীগের দোসর” আখ্যা দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন পরে একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ গিয়ে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করলে যথারীতি নাটকের প্রদর্শনী শুরু হয়। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা আবার সংগঠিত হয়ে নাট্যশালার ফটকের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা ফটক ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে শিল্পকলার মহাপরিচালক দেশ নাটকের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে প্রদর্শনী বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন।

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
Theme Customized By Shakil IT Park